স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দরকার স্মার্ট অভ্যেস
স্মার্টফোন তৈরী ই করা হয়েছে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য
“স্মার্টফোন মজার জিনিস ও আর কাজের ওl তাই স্মার্টফোনে সময় নষ্ট করার একটি আকর্ষণীয় সাধন l একদল ডিসাইনার এবং মনোবৈজ্ঞানিক রা মিলে প্রতি টা বৈশিষ্ট, রং এবং শব্দ এইভাবে তৈরী করেছে যাতে আমরা বার বার আমাদের মনোযোগ আমাদের স্মার্টফোনেই আটকে থাকেl
নিজের চারপাশে একটু মন দিয়ে দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে এটা খুব ভালো কাজ করছেl সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী আমরা দিনে কম-বেশি ১৫০ বার নিজের ফোন দেখিlঅন্য কোনো কাজ যদি আমরা এত ঘন ঘন করতাম তাহলে হয়তো ডাক্তার দেখানোর কথা চিন্তা করতামl ব্যাপার টা কি বলুন তো? আমরা কি ইচ্ছে করে নিজের কাজে নিজেই বাধার সৃষ্টি করছি?
কিছু লক্ষণ যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি একটা চক্রে আটকে আছেনl
যখন আমাদের কোনো কাজ করে ভালো লাগে তখন আমরা সেই কাজ তা বার বার করি এবং আস্তে আস্তে সেইটা আমাদের অভ্যেসে পরিণত হয়ে যায়l আর সেই অভ্যাসের দরুন দরকার না থাকলেও নিজেদের অজান্তেই আমাদের হাত চলে যায় ফোন এর দিকেl দেখুন তো নিচে লেখা অনুভূতি গুলো আপনার হয়ে কি না?
আকস্মিক টান: ১০ মিনিট আগে ফোন দেখা সত্ত্বেও কী আপনার ফোন দেখার কথা মনে হচ্চে? ৩০ সেকেন্ড আগে দেখে?
উদ্বেগ: ফোন বাড়িতে ফেলে এসেছেন আর তাই ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন ? অদ্ভুত একটা উদ্বেগ বোধ করছেন? বিভ্রম: ফোন তা বাজছে মনে হচ্ছে না? গিয়ে দেখলেন ফোন তো বাজেনি! ঈর্ষ্য: আপনার বন্ধুদের নতুন বা আপনার থেকে ভালো ফোন দেখে নিজের অজান্তেই একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়?
এই সব অনুভূতি গুলো আপনার স্মার্টফোন এর মায়ায় জড়িয়ে পড়ার লক্ষণl
স্মার্টফোন কে বোকা বানানোর কিছু উপায়
সুসংবাদ এই যে কিছু সাধারণ পরিবর্তন করলেই আপনার বেশির ভাগ অসুবিধা কম হয়ে যেতে পারে।
১. সচেতন থাকুন
- আপনার ফোন এর সাথে নিজের সম্পর্ক তা ভালো ভাবে লক্ষ্য করুন
দৈনন্দিন জীবনে লক্ষ্য করে দেখুন কেন এবং কিভাবে ফোন ব্যবহার করেন (যখন আপনি বোর হন না একাকিত্ত্ব বোধ করেন নাকি যখন আপনার সাথে যারা আছে তারা ফোন ব্যবহার করলে)l Get off your phone এবং Moment - এই ধরণের অ্যাপগুলি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে যে আপনি ফোনে কত টা সময় কাটানl গুগল Google's Digital Wellbeing এর মাধ্যমে এবং এপ্পল iOS 12 update এর মাধ্যমে আপনার ফোন সংক্রান্ত অভ্যেস গুলো তে নজর রাখতে সাহায্য করেl এই সেবা গুলি আপনাকে জানিয়ে দিতে পারে যে আপনি কত বার এবং কখন নিজের ফোন দেখেনl একবার চেক করে দেখবেন নাকি? সংখ্যা তা দেখে কি অবাক হলেন?আপনি এই সংখ্যা তা কি কমাতে চাইছেন? নিজের জন্য একটা নির্ধারিত সংখ্যার লক্ষ্য রাখতে পারেনl
- নিজেকে ঠিক পথে রাখার জন্য কিছু বহিরাগত রিমাইন্ডার রাখুন
নিজের জন্য কিছু মন্তব্য লিখুন -যেমন ধরুন "এখন কেন ?" বা "আমায় ধরো না”l এবার এই মন্তব্যের একটা ছবি তুলে ফোন এর হোমস্ক্রিন করে নিনl যখন ই আপনি ফোন তা হাথে নেবেন আপনি এই মন্তব্য তা দেখতে পাবেনl Space- এই অ্যাপটাও ব্যবহার করে দেখতে পারেন এটা আপনার ১০ সেকেন্ড এর একটা লোডিং স্ক্রিন জুড়ে দেয়l সেই ১০ সেকেন্ডে আপনি একটু ভাববার সময় পাবেনl এছাড়া ফোনে একটা স্ক্রিনলক ও দিয়ে রাখতে পারেনl তাতে আপনি একটু সময় ও পাবেন আর যে কেউ আপনার ফোনের তথ্য দেখতে ও পারবে নাl
- ফোন রাখার জায়গা পাল্টে দিন
আপনার কি ঘুম থেকে উঠেই বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে ফোন দেখার অভ্যেস? খাবার টেবিল এ বা কাজে যাওয়ার সময়? আপনার ফোন এর সাথে মানসিক দূরত্ব তৈরি করার জন্য শারীরিক দূরত্ব তৈরী করা টা খুব দরকারlবিছানার থেকে দূরে ফোন চার্জ করুনl কাজ করার সময় ফোন দেরাজে রেখে দিনl সম্ভব হলে মাঝে মাঝে ফোন বাড়িতে ছেড়ে যানlআপনি কি একটা গোটা দুপুর ফোন ছাড়া কাটাতে পারবেন?
২. নিজের ফোন সেটিংস কে ব্যক্তিগতকৃত করুন
- নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন
কোনো অপ্রাসঙ্গিক কোম্পানি আপনার মেলে কুপন পাঠালো কি না সেটা কি তখনি জানার কোনো দরকার আছে?এই ধরণের জিনিস গুলোই ফোন দেখার জন্য আমাদের উস্কে দেয়l এই ধরণের নোটিফিকেশন বন্ধ করে আমরা নিজেদের ফোন দেখা অনেক টা কমাতে পারিl এই ভাবে নোটিফিকেশন বন্ধ করা যায়:
- আই-ফোন -কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপ এর নোটিফিকেশন বন্ধ করার জন্য: *সেটিংস *→ নোটিফিকেশন →অ্যাপটা টিপুন→ নোটিফিকেশনের অনুমতি বন্ধ করুন -কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপএর লক-স্ক্রিন নোটিফিকেশন বন্ধ করার জন্য: *সেটিংস *→ নোটিফিকেশন → লক-স্ক্রিনে দেখান বন্ধ করুন
- এন্ড্রয়েড
- কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপ এর নোটিফিকেশন বন্ধ করার জন্য: *সেটিংস *→ নোটিফিকেশন →অ্যাপটা টিপুন→সমস্ত সেটিং বন্ধ করে দিন
- নোটিফিকেশন বন্ধ করার আর একটা উপায় হল যে যখন নোটিফিকেশন আসে তখন নোটিফিকেশন টা কে অনেক ক্ষণ টিপে রাখুন| তাহলে আপনি "নোটিফিকেশন বন্ধ" করার অথবা "নিরবভাবে নোটিফিকেশন দেখান" এর বিকল্প পাবেনl
- নোটিফিকেশন এলে আপনার ফোন এর লক স্ক্রিন যাতে আলোকিত না হয়ে ওঠে তার জন্য: সেটিংস → ডিসপ্লে → এম্বিয়েন্ট ডিসপ্লে সেটিং বন্ধ করুন
- ফোন স্ক্রিন কে "গ্রে মোড" এ রাখুন
রঙিন স্ক্রিন আমাদের ফোনে বেশী সময় কাটাতে প্রোৎসাহিত করে| এক সপ্তাহ নিজের ফোন স্ক্রিন কে "গ্রে মোড" এ রেখে দেখুন যে ফোন দেখা কমছে কি না (সব ফোন এই বিকল্প টি নেই. তাই আপনার ফোনের মডেল আর কালার স্ক্রিন সেটিংস একবার ইন্টারনেট এ দেখে নিন যে এই বিকল্প টি আছে না নেই। যদি না থাকে তাহলে "ভাইব্র্যান্ট কালার মোড" থেকে "স্ট্যান্ডার্ড কালার মোড" করে নিন ) গ্রে মোডে করার জন্য:
- আই-ফোন: সেটিংস → জেনেরাল→ একসেসিবিলিটি →ডিসপ্লে একোমোডেশনস → কালার ফিল্টারস →গ্রেস্কেল বেছে নিন
- এন্ড্রয়েড: "এবাউট ডিভাইস"→ "বিল্ড নম্বর" খুঁজুন→"বিল্ড নম্বর" টিপে রাখলে ফোন বলবে যে আপনি ডেভেলপার. এবার ফেরত যান → সেটিংস →ডেভেলপার অপশনস→সিমুলেট কালার স্পেস→* মোনোক্রোম* বেছে নিন
- সজাগ থাকুন
যখন আপনি নতুন কোনো অ্যাপডাউনলোড করবেন একটু খেয়াল করে দেখবেন যে কোন কৌশল ব্যবহার করে অ্যাপটা আপনাকে বার বার অ্যাপদেখতে বাধ্য করছে| আপনার পডকাস্ট অ্যাপকী আপনার ফোন এর স্ক্রীনসেভার সেটিং কে বাতিল করে আপনাকে ডাউনলোড গুলো দেখাচ্ছে?আপনার প্রায়শই খেলা গেম এর অ্যাপতা কি আপনাকে বার বার আপনার রোজকার স্কোর এবং অনন্য রা আপনার থেকে এগিয়ে আছে এই ধরণের নোটিফিকেশন দেখাচ্ছে?যতক্ষণ ফোন আর অ্যাপএর ডিসাইনার রা ডিসাইন দ্বারা প্রলোভন থেকে না শোর আসছে ততক্ষন আপনাকেই সজাগ হয়ে নিজের ফোনের সেটিঙস ঠিক থাকে করতে হবে| ওদের বিশ্বাস যে আপনি এগুলো খেয়াল করবেন না।
৩. এটাকে একটা খেলায় পরিণত করে দিন
- নিজের পরিজনদের জানান যে আপনি নতুন কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন
এই পরামর্শ টা কাজে লাগানো খুব সহজ এবং ভালো ফল দেয় কিন্তু আমরা প্রায়ই এটা কাজে লাগাতে ভুলে যাই। আপনার পরিজনদের এই ফোন এক্সপেরিমেন্টে যোগ দিতে অনুরোধ করুন। এমন কি এটা কে একটা পারিবারিক প্রতিযোগিতায় ও পরিণত করতে পারেন।বা আগে থাকতে কিছু মজার খেলা বা আড্ডার বিষয় ভেবে রাখুন যাতে শেষ মুহূর্তে কেউ বোর হয়ে ফোন না দেখতে শুরু করে। যত আপনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবেন ততই ফোন কম দেখবেন|
আপনি এই পরামর্শ গুলো কাজে লাগাতে প্রস্তুত?প্রথম দিকে হয়তো শক্ত মনে হতে পারে কিন্তু তাতে মুষড়ে পরার কোনো কারণ নেই। মনে রাখবেন অনেক রকমের পরিকল্পনার সাহায্যে স্মার্টফোন এবং তার অ্যাপগুলো
কে এতটা লোভনীয় করে তোলা হয়েছে। তাই এই চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে সময় তো লাগবে।যেই পরামর্শ তা আপনার সহজ মনে হয়ে সেইখান থেকেই শুরু করতে পারেন|
পরামর্শ: এই নির্দেশ গুলো আপনাকে বলে যে ফোনে কোথায় যেতে হবে কিন্তু প্রতি ফোন এবং তার
অপারেটিং সিস্টেম আলাদা হয়ে। তাই যেই বাটন গুলো টেপা দরকার সেই গুলো আপনার ফোনে হয়তো অন্য নাম থাকতে পারে। সেই জন্য আপনার ফোনের সেটিং এবং ইন্টারনেটে আপনার ফোনের মডেল সম্পর্কে বিস্তারিত খবর নিয়ে এই নির্দেশ গুলি কাজে লাগাবেন।
যদি আপনার এই প্রবন্ধ টি পছন্দ হয়েছে, তাহলে এগুলো ও দেখতে পারেন: